কুদরাতি শাহী মশলা (Kudrati Shahi Masala)
কুদরাতি শাহী মশলা (Kudrati Shahi Masala) একটি নিখুঁতভাবে ভারসাম্যপূর্ণ মশলার মিশ্রণ, যা আপনার রান্নায় যোগ করবে রাজকীয় স্বাদ ও গন্ধ। এটি মূলত উত্তর ভারতীয় ও মুঘলাই খাবারের ঐতিহ্যবাহী মশলার ধাঁচে তৈরি, যেখানে প্রতিটি উপাদান আলাদাভাবে ভাজা ও গুঁড়ো করে মিশ্রিত করা হয়েছে স্বাদের গভীরতা বজায় রাখতে।
Ingredients (উপাদানসমূহ):
- দারুচিনি (Cinnamon)
- এলাচ (Cardamom)
- লবঙ্গ (Cloves)
- জয়ফল (Nutmeg)
- জয়ত্রি (Mace)
- জিরা (Cumin)
- ধনে (Coriander Seeds)
- গোলমরিচ (Black Pepper)
- শুকনা মরিচ (Red Chilli – পরিমিত পরিমাণ)
- তেজপাতা (Bay Leaf)
Flavour (স্বাদ ও গন্ধ):
- মশলাদার ও উষ্ণ সুবাস
- ঝাল, মিষ্টি ও টক-মসলাদার স্বাদের সুষম মিশ্রণ
- রান্নায় যোগ করলে খাবারের রঙ, ঘ্রাণ ও টেক্সচারে আনে শাহী পরিপূর্ণতা
Usage (ব্যবহার):
- বিরিয়ানি ও পোলাও: রান্নার শেষ পর্যায়ে সামান্য কুদরাতি শাহী মশলা যোগ করুন, গন্ধ হবে মনমাতানো।
- মাংসের রান্না: গরু, খাসি, মুরগি বা মাছের কারি ও ভুনায় মিশিয়ে দিলে স্বাদ হবে রেস্টুরেন্ট মানের।
- কাবাব ও গ্রিল: মেরিনেশনে ১–২ চা চামচ শাহী মশলা মিশিয়ে দিন, কাবাব ও গ্রিলড মাংসে আসবে শাহী ঘ্রাণ।
- ডাল ও সবজি: সামান্য পরিমাণ ব্যবহার করলে নিরামিষ রান্নায়ও পাওয়া যাবে বিশেষ স্বাদ।
প্রধান বৈশিষ্ট্য:
- ১০০% প্রাকৃতিক, কৃত্রিম রং ও প্রিজারভেটিভমুক্ত
- স্বাস্থ্যকর ও হজমে সহায়ক
- অল্প পরিমাণেই খাবারে যোগ করে ভারসাম্যপূর্ণ স্বাদ
ইসলামিক দৃষ্টিকোণ:
হাদীসে উল্লেখ আছে, অনেক ভেষজ ও মশলা শরীরের হজম শক্তি বৃদ্ধিতে সহায়ক এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে উপকারী। তাই কুদরাতি শাহী মশলা শুধু রান্নার স্বাদই নয়, বরং শরীরের জন্যও কল্যাণ বয়ে আনে।
কুদরাতি শাহী মশলা (Kudrati Shahi Masala) ব্যবহারে অল্প পরিমাণেই রান্না হয়ে ওঠে রাজকীয় স্বাদের।
ব্যবহারের নিয়ম:
- রান্নার শেষ পর্যায়ে ½ – ১ চা চামচ শাহী মশলা যোগ করুন। এতে খাবারের গন্ধ ও স্বাদ সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে যাবে।
- কাবাব, বিরিয়ানি, পোলাও বা বিশেষ ভুনায় মেরিনেশনের সময় মাংসের সাথে মিশিয়ে দিন।
- সবজি, ডাল বা ডিমের রান্নায় সামান্য যোগ করলেও মিলবে আলাদা স্বাদ ও গন্ধ।
- প্রস্তুতিতে টিপস:
- অতিরিক্ত মশলা ব্যবহার করবেন না, এতে খাবারের আসল স্বাদ ঢেকে যেতে পারে।
- রান্নার আগে মাংস বা সবজি মেরিনেট করতে ১ চা চামচ দই বা লেবুর রসের সাথে মশলা মিশিয়ে ব্যবহার করুন।
- ভুনা বা কারির ঝোল ঘন করার সময় সামান্য শাহী মশলা ছিটিয়ে দিলে খাবারে আসবে রেস্টুরেন্টের মতো ঘ্রাণ।
প্রস্তাবিত ব্যবহার:
- বিরিয়ানি/পোলাও: প্রতি ১ কেজি চালের জন্য ১–২ চা চামচ।
- মাংস/কারি: প্রতি ১ কেজি মাংসে ২–৩ চা চামচ।
- সবজি/ডাল: ৫০০ গ্রাম সবজি বা ডালের জন্য ½ চা চামচ।
- কুদরাতি শাহী মশলা – রান্নার প্রতিটি পদে আনে রাজকীয় স্বাদের ছোঁয়া।
- কুদরাতি শাহী মশলা (Kudrati Shahi Masala) দীর্ঘদিন সতেজ ও সুগন্ধি রাখতে সঠিকভাবে সংরক্ষণ করা জরুরি।
সংরক্ষণের নিয়ম:
- ঠান্ডা, শুষ্ক ও বাতাস চলাচলকারী স্থানে রাখুন।
- সরাসরি সূর্যের আলো থেকে দূরে সংরক্ষণ করুন।
- সবসময় এয়ারটাইট কন্টেইনারে বা প্যাকেটের জিপ ভালভাবে বন্ধ করে রাখুন।
- ভেজা চামচ বা হাত দিয়ে স্পর্শ করবেন না, এতে মশলার গুণাগুণ ও ঘ্রাণ নষ্ট হতে পারে।
- ফ্রিজে রাখার প্রয়োজন নেই।
Best Practice:
প্লাস্টিক বা কাচের এয়ারটাইট জারে সংরক্ষণ করলে শাহী মশলার সুবাস ও স্বাদ দীর্ঘসময় অক্ষুণ্ণ থাকে।
কুদরাতি শাহী মশলা দিয়ে করা যায় এমন কিছু রান্নার-রেসিপি:
১. শাহী বিরিয়ানি
উপকরণ:
বাসমতি চাল – ১ কেজি
মাংস (গরু/খাসি/মুরগি) – ১ কেজি
পেঁয়াজ – ৪টি (ভাজা)
আদা-রসুন বাটা – ২ টেবিল চামচ
টক দই – ১ কাপ
কুদরাতি শাহী মশলা – ২ চা চামচ
লাল মরিচ গুঁড়া – ১ চা চামচ
লবণ – স্বাদমতো
ঘি – ½ কাপ
প্রস্তুত প্রণালী:
১. মাংসে দই, আদা-রসুন বাটা, লবণ ও কুদরাতি শাহী মশলা মিশিয়ে কমপক্ষে ১ ঘণ্টা মেরিনেট করুন।
২. চাল অর্ধসেদ্ধ করে নিন।
৩. হাঁড়িতে মাংস, অর্ধসেদ্ধ চাল, ভাজা পেঁয়াজ ও ঘি স্তরে স্তরে দিন।
৪. ঢাকনা দিয়ে দমে রাখুন ৩০–৪০ মিনিট।
👉 শাহী সুবাসময় বিরিয়ানি তৈরি।
২. গরুর শাহী ভুনা
উপকরণ:
গরুর মাংস – ১ কেজি
পেঁয়াজ কুচি – ২ কাপ
আদা-রসুন বাটা – ২ টেবিল চামচ
দই – ½ কাপ
কুদরাতি শাহী মশলা – ২ চা চামচ
গরম মশলা – ১ চা চামচ
লবণ – স্বাদমতো
তেল – ½ কাপ
প্রস্তুত প্রণালী:
১. তেলে পেঁয়াজ ভেজে বাদামী হলে আদা-রসুন বাটা দিন।
২. মাংস, দই, লবণ ও শাহী মশলা মিশিয়ে ভুনা করতে থাকুন।
৩. মাংস নরম হয়ে ঝোল ঘন হলে নামিয়ে নিন।
👉 খাওয়ার আগে ধনেপাতা ছড়িয়ে পরিবেশন করুন।
৩। মুরগি মুসল্লম (Chicken Musallam)
উপকরণ:
পুরো মুরগি – ১টি (প্রায় ১.২ কেজি)
পেঁয়াজ পেস্ট – ১ কাপ
আদা-রসুন বাটা – ২ টেবিল চামচ
টক দই – ১ কাপ
কাজুবাদাম পেস্ট – ২ টেবিল চামচ
খাসখাস বাটা – ১ টেবিল চামচ
কিশমিশ – ১ টেবিল চামচ
কুদরাতি শাহী মশলা – ২ চা চামচ
শুকনা মরিচ গুঁড়া – ১ চা চামচ
লবণ – স্বাদমতো
ঘি – ½ কাপ
সেদ্ধ ডিম – ২টি (মুরগির ভেতরে ভরার জন্য ঐচ্ছিক)
প্রস্তুত প্রণালী:
১. পুরো মুরগি পরিষ্কার করে ধুয়ে নিন এবং হালকা কেটে নিন যাতে মশলা ভেতরে ঢুকতে পারে।
২. দই, আদা-রসুন বাটা, কাজুবাদাম-খাসখাস বাটা, শাহী মশলা, লবণ দিয়ে মেরিনেড তৈরি করুন।
৩. মুরগি ভালোভাবে এই মেরিনেডে মাখিয়ে অন্তত ৪–৫ ঘণ্টা (অথবা সারা রাত) রেখে দিন।
৪. কড়াইয়ে ঘি গরম করে পেঁয়াজ পেস্ট ও বাকি মশলা দিয়ে ভুনুন।
৫. মেরিনেট করা মুরগি ঢেলে অল্প আঁচে রান্না করুন। চাইলে মুরগির ভেতরে সেদ্ধ ডিম ভরে নিতে পারেন।
৬. ঢেকে দিন এবং আস্ত মুরগি নরম ও ঝোল ঘন হওয়া পর্যন্ত রান্না করুন।
৭. শেষে ভাজা পেঁয়াজ ও কিশমিশ দিয়ে সাজান।
👉 গরম ভাত, পোলাও বা নানরুটির সঙ্গে পরিবেশন করুন। একেবারেই রাজকীয় এক পদ।
৪. শাহী চিকেন রোস্ট
উপকরণ:
মুরগি – ১টি (১ কেজি)
পেঁয়াজ পেস্ট – ১ কাপ
আদা-রসুন বাটা – ২ টেবিল চামচ
টক দই – ½ কাপ
কাজুবাদাম পেস্ট – ২ টেবিল চামচ
কুদরাতি শাহী মশলা – ২ চা চামচ
লবণ ও চিনি – স্বাদমতো
ঘি – ½ কাপ
প্রস্তুত প্রণালী:
১. মুরগি ধুয়ে দই, আদা-রসুন বাটা, কাজুবাদাম পেস্ট, শাহী মশলা দিয়ে মেরিনেট করুন ১–২ ঘণ্টা।
২. কড়াইয়ে ঘি গরম করে পেঁয়াজ বাদামী করে ভাজুন।
৩. মেরিনেট করা মুরগি দিয়ে অল্প আঁচে রান্না করুন যতক্ষণ না মুরগি নরম হয়।
৪. ঝোল ঘন হলে নামিয়ে নিন।
👉 নরম মাংস ও সুগন্ধি গ্রেভি, পরিবেশনের সময় কিশমিশ ছড়িয়ে দিন।
৫. মাটন রেজালা
উপকরণ:
খাসির মাংস – ১ কেজি
পেঁয়াজ পেস্ট – ১ কাপ
আদা-রসুন বাটা – ২ টেবিল চামচ
টক দই – ½ কাপ
কাজুবাদাম ও খাসখাস বাটা – ২ টেবিল চামচ
কুদরাতি শাহী মশলা – ২ চা চামচ
লবণ – স্বাদমতো
ঘি – ½ কাপ
প্রস্তুত প্রণালী:
১. মাংস ধুয়ে দই, বাদাম-খাসখাস বাটা, শাহী মশলা ও লবণ মিশিয়ে মেরিনেট করুন।
২. কড়াইয়ে ঘি গরম করে পেঁয়াজ ভেজে নিন।
৩. মাংস ঢেলে ধীরে ধীরে রান্না করুন যতক্ষণ না নরম হয়।
৪. শেষে গোলাপ জল ছিটিয়ে দিন।
👉 রুটি, পরোটা বা পোলাওয়ের সঙ্গে পরিবেশনের জন্য আদর্শ।
৬. ল্যাম্ব রোস্ট
উপকরণ:
ল্যাম্ব লেগ – ১টি (১–১.৫ কেজি)
রসুন বাটা – ১ টেবিল চামচ
আদা বাটা – ১ টেবিল চামচ
টক দই – ½ কাপ
কুদরাতি শাহী মশলা – ২ চা চামচ
লবণ – স্বাদমতো
অলিভ অয়েল – ২ টেবিল চামচ
প্রস্তুত প্রণালী:
১. ল্যাম্বে ছুরি দিয়ে ছোট ছোট কাটা দিন।
২. দই, আদা-রসুন, শাহী মশলা ও লবণ মিশিয়ে মেরিনেট করুন কমপক্ষে ৪–৫ ঘণ্টা (অথবা সারা রাত)।
৩. ওভেন ১৮০° সেলসিয়াসে প্রি-হিট করে ল্যাম্ব ১.৫–২ ঘণ্টা রোস্ট করুন।
৪. মাঝেমধ্যে মেরিনেড ব্রাশ করুন যাতে মাংস শুকিয়ে না যায়।
👉 সোনালি বাদামী রং হলে ওভেন থেকে নামান, লেবুর রস ছড়িয়ে পরিবেশন করুন।
৭. শাহী সবজি কারি
উপকরণ:
মিক্সড সবজি – ৫০০ গ্রাম
টমেটো কুচি – ২টি
পেঁয়াজ – ১ কাপ
কুদরাতি শাহী মশলা – ১ চা চামচ
লবণ – স্বাদমতো
তেল – ২ টেবিল চামচ
প্রস্তুত প্রণালী:
১. তেলে পেঁয়াজ ভেজে সবজি দিন।
২. টমেটো, লবণ ও শাহী মশলা দিয়ে ভালোভাবে নেড়ে দিন।
৩. অল্প পানি দিয়ে ঢেকে রান্না করুন যতক্ষণ সবজি নরম হয়।
নিরামিষ পদে শাহী ঘ্রাণের স্বাদ পাবেন।
৮. ডিমের শাহী কারি
উপকরণ:
ডিম – ৪টি
পেঁয়াজ কুচি – ১ কাপ
টমেটো – ১টি
দই – ২ টেবিল চামচ
কুদরাতি শাহী মশলা – ১ চা চামচ
লবণ – স্বাদমতো
তেল – ২ টেবিল চামচ
প্রস্তুত প্রণালী:
১. ডিম সেদ্ধ করে খোসা ছাড়িয়ে নিন।
২. তেলে পেঁয়াজ ও টমেটো ভেজে মসলা দিন।
৩. দই, লবণ ও শাহী মশলা মিশিয়ে ঝোল ঘন করুন।
৪. শেষে ডিম দিয়ে ৫ মিনিট রান্না করুন।
ভাত/পোলাউ বা পরোটা/রুটির সঙ্গে দারুণ মানানসই।
কুদরাতি শাহী মশলা (Kudrati Shahi Masala) প্রতিদিনের সাধারণ রান্নাকে পরিণত করে শাহী স্বাদে ভরপুর বিশেষ পদে। এটি বিভিন্ন খাবারের সঙ্গে অসাধারণভাবে মানানসই।
ভাত ও চালজাতীয় পদে:
বিরিয়ানি, পোলাও, তেহারি ও খিচুড়িতে শাহী মশলা যোগ করলে মিলবে রাজকীয় সুবাস ও স্বাদ।
সাধারণ ভাতের সঙ্গে গরু বা খাসির ভুনায় শাহী মশলা দিলে আসবে রেস্টুরেন্ট-স্টাইল টাচ।
মাংসের পদে:
গরু, খাসি, মুরগি, ল্যাম্ব বা মাছের কারি ও কাবাবে দারুণ মানায়।
চিকেন রোস্ট, মাটন রেজালা, মুসল্লম ও কাবাব মেরিনেশনে অপরিহার্য।
নিরামিষ পদে:
সবজি ভাজি, পনির কারি, আলু-ডিম কারি ও ডালে অল্প মশলা যোগ করলেই স্বাদ হবে বহুগুণে উন্নত।
রুটি ও নানরুটির সঙ্গে:
রুটি, নান, পরোটা বা লুচির সঙ্গে খাওয়ার উপযোগী সব গ্রেভি ও ভুনায় অসাধারণ মানায়।
সালাদ ও স্ন্যাকসে:
দই-ভিত্তিক সালাদ, চিকেন সালাদ বা স্যান্ডউইচে সামান্য শাহী মশলা ছিটিয়ে দিলে স্বাদে নতুন মাত্রা পায়।
কুদরাতি শাহী মশলা প্রতিটি পদে আনে রাজকীয় সুবাস ও ঐতিহ্যের স্বাদ, যা পারিবারিক আয়োজন থেকে শুরু করে অতিথি আপ্যায়নে বিশেষভাবে মানানসই।
